সময়ের উন্নয়ন ডেস্ক:-
লামা উপজেলা মাসিক আইন শৃঙ্খলা ও সমন্বয় কমিটির সভায়, সাবেক মন্ত্রী পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, সংসদীয় কমিটির সভাপতি বীর বাহাদুর বলেন, ‘কেউ স্বভাবগত আবার কেউ পেটের দায়ে চুরি করেন। এ ক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সুযোগ সুবিধার সুসম বন্টন করে জনপ্রতিনিধিরা ভালো ভূমিকা রাখতে পারেন।’ ২৫ ফেব্রুয়ারি রোববার বেলা ১১ টায় লামা উপজেলা পরিষদ হলরুমে অনুষ্ঠিত সভায় সাবেক মন্ত্রী সাংসদ বীর বাহাদুর উশৈসিং আরো বলেন, পার্বত্য জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে এখানকার মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা আগের চেয়ে অর্থনৈতিকভাবে অনেক বেশি স্বাবলম্বী হচ্ছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি এবং তাঁর আন্তরিকতার কারণে পার্বত্য এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়নকর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন হয়েছে চলমান রয়েছে অনেক কাজ।’
সমন্বয় সভায় বিভাগীয় অগ্রগতি প্রতিবেদন
দিয়ে উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ হানিফ বলেন, ‘এলজিইডি কর্তৃক বিগত ৫ বছরে ১৫২ কোটি ৫৮ লাখ টাকার কাজ হয়েছে লামায়। আরো ৪২ কোটি টাকার কাজ চলমান আছে। ইউনিয়নগুলোতে আইভি ভুক্ত রাস্তার অবস্থার উন্নয়ন হয়নি এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, উন্নয়েনর উপর ভিত্তি করে সেসব রাস্তার মান উন্নয়ন বা পল্লী সড়কের মান বাড়বে। জেলা-উপজেলা, ইউনিয়ন, গ্রাম কানেক্টিভিটির গুরুত্ব বিবেচনা করে উন্নয়ন হচ্ছে। আজিজনগর ইউনিয়ন চাম্বি মফিজ বাজারে, বাজার সেট করার প্রস্তাবনার অগ্রগতির কথা তুলে ধরে জানানো হয়,
বাজার সেট ডিবিপি ভুক্ত আছে, জায়গার স্বল্পতা না থাকলে সেট হবে। ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স বরাদ্দ আছে। এডিবির কাজে বিলম্বের হেতু ব্যাখ্যা করে বলা হয়, দরপত্র আহবান হয়েছে কাজ চলমান। চার কিস্তির বরাদ্দ আনুপাতিক করে কাজের দ্রুততার জন্য টেন্ডার করা হয়েছে।
ফাঁসিয়াখালী থেকে সাপেরগাড়াসহ বড় চারটি সড়ক করার ঘোষনা বাস্তবায়নের বিষয়ে বলা হয়, প্রকল্পটি একনেকে পাশ হয়েছে, যে কোনো সময়ে কাজ টেন্ডার হবে। ‘রাজবাড়ি কুরালিয়া সড়কের কাজ অর্ধনির্মিত অবস্থায় থাকায় জনভোগান্তি হচ্ছে। রাস্তাটি দীর্ঘ চার বছর ধরে থেমে থেমে কাজ চলায় নাখোশ স্থানীয়রা।’ এ ব্যাপারে প্রকৌশলী বলেন, ‘ঠিকাদারদের পার্টনারশীপ দ্বন্দ্বের ফলে কাজটি বিলম্বিত হচ্ছে। এ ব্যপারে নির্বাহী প্রকৌশলী জানেন, ঠিকাদারদেরকে তাগাদা দেয়া হচ্ছে।’ এই সময় কাজের স্থানীয় পার্টনার ঠিকাদার বিজয় আইচকে অনুষ্ঠানে ডেকে কাজটি দ্রুত শেষ করার জন্য তাগাদা দেন প্রধান অতিথি।
অনুষ্ঠানে পিআইও জানান, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ৬৫টি প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। কাজের অগ্রগতি শতভাগ। প্রধান মন্ত্রীর বিশেষ প্রকল্প ১২০টি ঘরের কাজ শেষের পর্যায়। পিআইও ব্রিজের কাজ শেষ। মুক্তিযোদ্ধাদের ঘরের কাজ সমাপ্ত হয়েছে। এসময় প্রধান অতিথি উদাহরণ টেনে বলেন, ‘সেতু কালভার্টে যেন এপ্রোচ সড়কের সাইডে মাটির কাজ ভালোভাবে করা হয়। কাজ না করলে ঠিকাদারকে বিল না দেয়ার নির্দেশনা দেন এমপি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওষুদ সংগ্রহের ব্যাখ্যা দেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। তিনি বলেন, বর্তমানে যে পরিমান ওষুধ আছে, তা আরো তিনমাস চলবে। পরিচ্ছন্ন কর্মি ও বাগান মালিসহ জনবল সংকট। ইউনিয়নগুলোতে সাপ্তাহে একদিন ডাক্তার যায়। ৪৮ ধরনের ওষুধ নাই। ৫৬ ধরনের ওষুধ আছে। ওষুধ কম আসার কারণ ছিলো, রোগিদের অনলাইন এন্ট্রি না দেয়া। বর্তমানে দেয়া হচ্ছে। এম্বুলেন্স চালক নেই। ২০ জন ডাক্তারের স্থলে ১১ জন আছে। তিনি বলেন আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগ পক্রিয়া ত্রুটিপূর্ণ। নিয়োগ কর্তৃপক্ষ এনজিও চার লাখ টাকা দাবি করে। যার ফলে বর্তমানে যারা বিনা বেতনে বা কম বেতনে কাজ করছে, তাদেরকে বাদ দিয়ে আউটসোর্সিং নিয়োগ দেয়া হচ্ছে অন্যদেরকে। ফলে কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। এ সময় প্রধান অতিথি বিষয়টি সংশ্লিষ্ট উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে মুঠো ফোনে জানান এবং তাদের মনগড়া নিয়োগের জনবল রিসিভ করা হবেনা বলে জানিয়ে দেন। ৭ টন ওজনের এক্স-রে মেশিনটি বিগত বন্যায় ডুবে নষ্ট হয়ে যায়। নার্স ৩৬ জনের স্থলে ১৬ জন আছে।
পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের অগ্রগতি প্রতিবেদন প্রদানকালে ডাঃ বাপ্পি বলেন,
সরই ১০ শয্যা বিশিষ্ট হসপিটালে জনবল নিয়োগ দেয়া হয়নি। নিয়োগের দাবি জানানো হয়। বিভাগীয় অগ্রগতি প্রতিবেদন শুনে প্রধান অতিথি, তামাকের বিকল্প চাষে কৃষকদেরকে অনুপ্রেরণা যোগানোর জন্য বলেন। তিনি বলেন, মিশ্র ফল চাষ, কাজু বাদাম, কফি, ইক্ষু ও মসলা চাষে কৃষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে। পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক রেখে পরিকল্পিত উপায়ে বাগান সৃজন এবং তামাকের বিকল্প অন্য ফসল ও বাগান সৃজন করার পরামর্শ দেন সাংসদ। জুম চাষ ঠিক রেখে বন সৃষ্টি, পানির উৎস বের করা ও পরিকল্পিত উপায়ে বাগান করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান। উন্নয়নমূলক কাজ দৃশ্যমান করার বিষয়ে এখনই তৎপর হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, প্রত্যেককে দায়িত্বশীল হয়ে কাজ করতে হবে। ঋণ প্রদানের মাধ্যমে কৃষকের পাশে দাঁড়াতে বলেন এবং বিষয় ভিত্তিক জ্ঞান দেয়ার নির্দেশ দেন। সরকারের সুবিধাগুলোর যথাযথভাবে ব্যবহার করতে জোর দেন তিনি। কৃষিকে উন্নত করে দেশকে সমৃদ্ধশালী করার আহ্বান জানান।
নির্মান পন্য বালু মহল ইজারা দিয়ে রাজস্ব আয়ের জন্য জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, অন্যথায় প্রয়োজন মেটাতে মানুষ বেআইনি কাজ করবে। যত্রতত্র পয়েন্ট থেকে বালু উত্তোলন করে, কিছুতেই রাস্তাঘাট ব্রিজ কালভার্টের ক্ষতি করা যাবেনা। লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রির সাথে স্থানীয় ত্রিপুরা, মুরুংদের সৃষ্ট ভূমি বিরোধ নিরসনে ইতোপূর্বে ত্রিপক্ষীয় আলোচনার সর্বশেষ আপডেট জানতে চেয়েছেন তিনি। এর আর আগে সভাসদরা বলেন, ‘একটি মহল বিরোধটি মীমাংসা না করে সহজ সরল উপজাতি কয়েকটি পরিবারকে ব্যবহার করে লামা উপজেলার দীর্ঘ লালিত সম্প্রীতির ঐতিহ্য বিনষ্ট করার অপতৎপরতা চালাচ্ছে।’ অনুষ্ঠান শুরুর আগে ইউএনডিপি কর্তৃক লামা পৌরসভার পরিচ্ছন্ন কাজে সহায়তা স্বরূপ আনুষ্ঠানিক ভাবে একটি পিকআপ ভ্যানের চাবি হস্তান্তর করেন সাংসদ বীর বাহাদুর উশৈসিং। সভায় সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা, জনপ্রতিনিধি, সামাজিক ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।