সময়ের উন্নয়ন ডেস্ক:-
লামায় জিনামেজো অনাথ আশ্রমের কারিগরি শিক্ষা ভবন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে একুশে পদক প্রাপ্ত প্রফেসর ড. জিনবোধি মহাস্থবির সাবেক চেয়ারম্যান প্রাচ্য ভাষা বিভাগ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বলেন, ‘বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি হচ্ছে ঠিকানা বিহীন মানুষের আশ্রয়স্থল’। ২৮ ফেব্রুয়ারি বুধবার অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিঁনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত স্বপ্ন পূরণে সারা দেশের ন্যয় জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনার রূপকল্প বাস্তবায়নে পাহাড়ে বীর বাহাদুর ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। শেখ হাসিনার অত্যান্ত আপনজন বীর বাহাদুর এই অঞ্চলে শিক্ষা, যোগাযোগ, স্বাস্থ্য, কৃষিসহ জনগোষ্টীর জীবন-মান উন্নয়নে একজন বিশ্বস্ত অভিভাবক হয়ে কাজ করে চলেছেন। অনুষ্ঠানে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান বীর বাহাদুর উশৈসিং বলেন, ‘সত্যেকার অর্থে মহান স্রস্টাই একমাত্র সকল প্রাণির অভিভাবক।’ তিঁনি বলেন, আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ, কারণ তিঁনি আমাকে ভালো বেসে এই অঞ্চলে দীর্ঘকাল ধরে নেতৃত্ব দিয়ে উন্নয়নের সুযোগ করে দিয়েছেন। অনুষ্ঠান শেষে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে সাত কোটি টাকা ব্যয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবু খাঁ সড়কের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। এসময় প্রকৌশল বিভাগের লোকজনসহ লামা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল, পৌর মেয়র মোঃ জহিরুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার শান্তুনু কুমার দাশসহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। প্রসঙ্গত: লামা উপজেলায় জিনামেজো বড় অনাথ আশ্রমগুলির মধ্যে অন্যতম৷ অনাথ শিশুদের প্রতিপালনের পাশাপাশি পিছিয়ে পড়া, দরিদ্র পড়ুয়াদের জন্য এর অবদান যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ৷ সেবা আর আলোর মশাল হাতে ২৬ বছর পার করেছে প্রতিষ্ঠানটি৷ ঠিকানা বিহীন অনাথ শিশুদের নিগ্রহ রুখতে উ নন্দমালা থের ১৯৯৯ সালে ত্রিশডেবাপাড়ায় ১৭ জন অনাথ শিশু নিয়ে জিনামেজো অনাথ আশ্রমের পথ চলা শুরু করেন। আমাদের সমাজে চোখে পড়ে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির বালক-বালিকা, যাদের মাথার উপর ছাদ নেই, ধরার মতো অভিভাবকের হাত নেই; এমন অনেক নির্দয় চিত্র৷ এমন পরিস্থিতে লামা ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে জিনামেজো অনাথ আশ্রম স্থাপন করেন উ নন্দমালা থের৷ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির উন্নতি ঘটে৷ বতর্মানে এর আবাসিক বালক-বালিকার সংখ্যা প্রায় ১০৮৷ শিক্ষা, সংস্কৃতি কৃষ্টি কালচারে এই প্রতিষ্ঠান সত্যি বিশিষ্টতার দাবি রাখে৷ আর পাঁচটা অনাথ আশ্রম বলতে যা বোঝায়, ব্যাপারটা তা নয় মোটেই৷ সমাজে এই ধরনের অনাথ আশ্রমের ব্যতিক্রম বিষয় হচ্ছে, এই প্রতিষ্ঠানকে সহযোগিতার ক্ষেত্রে জাত ধর্মের ভেদ করেন না কেউ৷ জসিম উদ্দিন নামের একজন স্থানীয় বাসিন্দা শিক্ষা ভবনের জন্য জমি দান করেছেন। সব মিলিয়ে জিনামেজো অনাথ আশ্রম সত্যেই অনাথ শিশুদের নিরাপদ ঠিকানা।
সমস্ত খরচ চালানোর জন্য এখানে বছরে প্রয়োজন হয় প্রায় ১৬ লক্ষ টাকা। এতে বিভিন্ন দানের পাশে থাকে সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের অনুদানও, চট্টগ্রামের বৌদ্ধ কল্যান ট্রাস্ট, সেনাবাহিনী, জেলা পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী, সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি, উন্নয়ন বোর্ড এবং নিজস্ব ৫একর ভূমিতে উৎপন্ন ফলফলাদি ও বৃক্ষরাজি ৷ বালক ও বালিকা বিভাগের পৃথক ব্যবস্থপনা রয়েছে। দানের উপর নির্ভর করে এই অনাথ আশ্রমের কিছু স্থাপর সম্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ১টি সদ্য নির্মিত কারিগরি স্কুল ভবন৷ এর জন্য একজন মুসলিম বাসিন্দা জমি দান করেছেন। রয়েছে, ২তল ভবন ২টি, ১তল ভবন ১টি, আবাসিক একাডেমিকসহ। এই আশ্রমে থেকে লেখা পড়ার হাতে খড়ি, এমন অনেকে প্রশাসন ক্যাডার১জন, ইঞ্জিনিয়ার হয়েছেন ১জন। সেনাবাহিনীতে ১জন, পুলিশে ৩জন ও শিক্ষকতায় ১১ জন।এছাড়া উচ্চ শিক্ষা নিতে বিদেশে আছেন কয়েকজন। অনাথ ও পিছিয়ে পড়া দুঃস্থ শিশুরা এই আশ্রমে থেকে স্কুলে পড়াশুনো করে৷ এই সব ছেলে মেয়েদের পরিবারের অনেকেই পড়াশুনো জানেন না৷ বৃহত্তর পৃথিবীর মুখোমুখি দাঁড়াতে ইংরেজি জানার বিকল্প নেই৷ এ বিষয়টি যেমন নিশ্চিত করা হচ্ছে; তেমনি দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। সরকারিভাবেতো বই দেয়া হয়, আবার পাশের স্কুলগুলোতে অনাথ পড়ুয়াদের বিনা বেতনেই শিক্ষাদান করা হয়৷ অনাথ আশ্রমের শিশুরা স্বপ্ন দেখে বড় হয়ে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, প্রশাসন ক্যডার, বিজ্ঞানী হবে তারা৷