1. live@www.dainiksomoyerunnayan.com : news online : news online
  2. info@www.dainiksomoyerunnayan.com : দৈনিক সময়ের উন্নয়ন :
  3. mdzahidlama@gmail.com : zahid Hasan : zahid Hasan
মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৫ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ :
বান্দরবানের লামায় মাসিক আইন শৃঙ্খলা ও সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত কক্সবাজারে সৈকতে নিখোঁজ পর্যটকের মরদেহ উদ্ধার সিইসিসহ চার কমিশনারের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন প্রেসিডেন্ট বান্দরবানে ড. এফ. দীপংকর মহাথের (ধুতাঙ্গ ভান্তে) এঁর রহস্যজনক মৃত্যুর তথ্য উদঘাটনের দাবীতে উত্তাল পার্বত্য জনপদ উপনিবেশিক-অসাংবিধানিক ১৯০০ সালের শাসনবিধি আইন বহাল রাখার ষড়যন্ত্র প্রতিরোধে পিসিএনপি রাজপথে নামবে লামায় স্ত্রী হত্যা চেষ্টার অভিযোগে আব্দুর রহিম জেলে পাহাড়ে বৈষম্যের কোটা বাতিলের দাবিতে পিসিসিপি’র স্মারকলিপি লামায় দুর্দর্শ ডাকাতি, দু’বোনের শ্লীলতাহানি বিবর্ণ পাহাড়ে সবুজ বিপ্লব বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার পেল কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন কোয়ান্টামম আরোগ্যশালায় বিশ্ব মেডিটেশন দিবসে দেড় সহস্রাধিক ধ্যানীর সমাগম

মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঘের খাঁচায় থাকা সেই আলম চৌধুরীর ইতিহাস

প্রতিবেদকের নাম:
  • প্রকাশিত: সোমবার, ১৮ মার্চ, ২০২৪
  • ১১২ বার পড়া হয়েছে

মোঃ শাহজাহান কবির ,পঞ্চগড় বোদা প্রতিনিধি।
দেশের সবচেয়ে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের বোদা থানা। সেখানে জন্মগ্রহণ করেন বাংলাদেশের বামরাজনীতির এক আদর্শনায়ক কমরেড মোহাম্মদ ফরহাদ। ১৯৮৭ সালে, অকাল প্রয়াণের আগ পর্যন্ত যিনি ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক। তখন দেখেছি এলাকায় কমিউনিস্ট পার্টির জোয়ার। নানা ইস্যুতে প্রায়ই লাল-পতাকাধারীদের বড় বড় মিছিল হতো। কখনও ক্ষেতমজুর সমিতি, কখনও কৃষক সমিতি, আবার কখনও কমিউনিস্ট পার্টির ব্যানারে। কমিউনিস্টদের ও আওয়ামিলিগের দাপটে সেই সময় আমাদের এলাকায় অন্য কোনো দলের অস্তিত্ব ছিল না বললেই চলে। তখন গ্রামগুলোতে ছিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের প্রবল দাপট। আর বোদা থানার অধিকাংশ চেয়ারম্যানই ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন পাঁচপীর ইউনিয়নের সফিকুল আলম চৌধুরী, মাড়েয়া ইউনিয়নের ওয়ালিউল ইসলাম মন্টু, সাকোয়া ইউনিয়নের মুকুল বকসী, চন্দনবাড়ি ইউনিয়নের মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল, শালশিড়ি ইউনিয়নের শামসুজ্জোহা প্রমুখ। তাঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন আমাদের কৈশোর ও যৌবনের নায়ক।সেই সময় প্রায়ই বড় বড় জনসভা হতো। সেসব জনসভায় ক্ষেতমজুর সমিতি, কৃষক সমিতি, কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখতেন। এর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ও পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোঃসেরাজুল ইসলাম ও কমরেড মোহাম্মদ ফরহাদের বক্তব্য ছিল আমাদের জন্য শ্রেষ্ঠ আকর্ষণ। আর স্থানীয় নেতাদের মধ্যে পাঁচপীর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সফিকুল আলম চৌধুরী, মাড়েয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ওয়ালিউল ইসলাম মন্টু ভাইয়ের বক্তব্য আমরা বিশেষ আগ্রহ নিয়ে শুনতাম।মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও কমিউনিস্ট মোঃ আব্দুর রউফ,সাবেক সফল উপজেলা চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা সমাজ সেবক মোঃআসরাফুল ইসলাম, তারা সবাই ছিলেন সত্যিকার অর্থে ‘অনলবর্ষী’ বক্তা!পরবর্তীতে তারা অনেকেই আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল। আলম ভাই বোদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি, রউফ নানা জেলা কৃষক লীগের সভাপতি, জোহা মামা উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি, মন্টু চাচা সম্ভবত উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকারী সদস্য ছিলেন।বিশাল দেহী সফিকুল আলম চৌধুরী (যিনি এলাকায় পরিচিত ছিলেন আলম চৌধুরী হিসেবে, আর আমাদের কাছে ছিলেন আলম ভাই) আমাদের কাছে ছিলেন এক ভিন্ন ব্যক্তিত্ব। ছোটবেলা থেকেই শুনে এসেছি, তিনি মুক্তিযদ্ধের সময় বাঘের সঙ্গে লড়াই করে তিন দিন টিকে ছিলেন! আলম ভাইকে দেখলেই আমরা বিস্ময়াভিভূত চোখে তাকিয়ে থাকতাম। সত্যিই আলম ভাইয়ের ছিল বাঘের সঙ্গে লড়াই করার মতো দশাসই চেহারা। আর জনসভার মঞ্চে তিনি রাগী রাগী চেহারায় যখন আবেগঘন বক্তৃতা দিতেন, তখন পুরো এলাকায় পিনপতন নীরবতা নেমে আসত। তাঁর বক্তব্য শুনে আমরা কতো না শিহরিত ও আন্দোলিত হয়েছি! আওয়ামি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বাইরে সেই সময় আমরা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও ব্যস্ত হয়ে পড়ি। এসব কর্মকাণ্ড পরিচালনায় টাকা-পয়সার দরকার হতো। এসব টাকা সংগ্রহের জন্য আমরা কয়েকজনের উপর নির্ভরশীল ছিলাম। তার মধ্যে আলম ভাই ছিলেন অন্যতম। অত্যন্ত কোমল হৃদয়ের অধিকারী আলম ভাই অতিথি আপ্যায়নেও ছিলেন অকৃপণ!রাজ মামা ও আমাকে আলম ভাই খুবই ভালো বাসতেন,উনার কাছে আমরা মুক্তিযুদ্ধের অনেক ইতিহাস শুনেছি, উনার বাসায় গেলে খুবই আপ্যায়ন করতো।আলম ভাই বোদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি হওয়ার সুবাধে আস্তে আস্তে আলম ভাইয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয়। বিভিন্ন সময় তাঁর মুখ থেকে শুনেছি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে তাঁর বীরত্বপূর্ণ লড়াইয়ের কথা। একদিন বৃষ্টিস্নাত বিকেলে এক রেস্টুরেন্টে বসে তিনি শুনিয়েছিলেন সেই ‘বাঘের সঙ্গে লড়া’ই করার কথা!মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনী তাঁকে বাঘের খাঁচায় নিক্ষেপ করে নির্যাতন করেছিল। আলম ভাই অসীম সাহসিকতা সঙ্গে সেই পরিস্থিতি জয় করেছিলেন।উল্লেখ্য, সফিকুল আলম চৌধুরী ছাত্র জীবনে ছিলেন তুখোড় ছাত্র নেতা। পরবর্তীকালে তিনি বামপন্থী রাজনীতিতে যোগ দেন। দেশপ্রেমে উজ্জীবিত আলম চৌধুরী একাত্তরে ঝাঁপিয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধে। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে মার্চ মাসে তিনি বোদা এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করে অস্ত্র-চালনার প্রশিক্ষণের আয়োজন করেন। তিনি স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের কাছে ত্রাস হিসেবে আবির্ভূত হন। তাকে ধরার জন্য ওই এলাকার রাজাকার ও শান্তিকমিটির নেতারা পুরস্কার ঘোষণা করে। এ পরিস্থিতিতে তিনি গোপনে লড়াই চালানোর প্রস্তুতি নেন। অবশেষে একদিন তিনি পুলিশের চোখে ধরা পড়ে যান। সেদিনটি ছিল ৩ সেপ্টেম্বর ১৯৭১। পরের দিন তাকে বোদা থানায় নিয়ে গেলে সেখানে তিনি একটি চেয়ারে বসেন। তা দেখে একজন অবাঙালী পুলিশ এসে তাকে চেয়ার থেকে লাথি মেরে ফেলে দেয় এবং বলে, “শালে কিঁউ কুরসি মে বইঠা হায়”। বোদা থানা থেকে তাঁকে হাত-পা ও চোখ বেঁধে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে ঠাকুরগাঁও ইপিআর ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়। সেখানে একজন লোক পাঞ্জাবী সেনাদের জিজ্ঞেস করে ‘ইয়ে কোন হ্যায়?’ সেনাদের একজন জবাবে বলল, “ইয়ে মুক্তিকা কর্নেল হ্যায়”। সঙ্গে সঙ্গে লোকটা তার পেটে ভীষণ জোরে একটা লাথি মারে। সারাদিন সারারাত অভুক্ত থাকার কারণে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন।জ্ঞান ফিরলে তাকিয়ে দেখেন, একটি বাঘের খাঁচায় দুটি বড় এবং দুটি বাচ্চা বাঘের মাঝে তিনি শুয়ে আছেন। চোখ খোলার সাহস নেই। মনে মনে ভাবেন বাঘ দিয়েই তাকে হত্যা করা হবে। কিন্তু কি আশ্চর্য বাঘ চারটি সরে গিয়ে খাঁচার পার্টিশন পার হয়ে একপাশে গিয়ে বসে থাকলো। একজন লোক এসে পার্টিশনের দরজা বন্ধ করে দিলো। বাঘের এহেন আচরণ দেখে সেনারাও খুব অবাক হলো। কিছুক্ষণ পর এক পাঞ্জাবী সেনা এসে একটি পোড়া রুটি বাঘের প্রস্রাবের উপর ছুঁড়ে মারে। ক্ষুধার জ্বালায় তিনি সেটিই খান। এরপর তাকে বাঘের প্রস্রাব মেশানো পানি খেতে দেওয়া হয়। সন্ধ্যায়ও তাঁকে পোড়া রুটি খেতে দেওয়া হয়। রুটি খেয়ে তিনি মেঝেতে বুক লাগিয়ে শুয়ে পড়েন। এমন সময় একটি বাঘের বাচ্চা এসে তার দু’পায়ের মাঝখানে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে। তার গায়ের রক্ত হিম হয়ে আসে। নির্ঘুম সারা রাত তাঁর এভাবেই কেটে যায়। কিন্তু কি আশ্চর্য বাঘ তাঁকে কিছুই করে না!সকালে তাকে বাঘের খাঁচা থেকে বের করে আনা হয় এবং যথারীতি একটি পোড়া রুটি খেতে দেওয়া হয়। তাঁর দু’হাত বেঁধে ফেলে এক পাঞ্জাবি সেনা তাকে জিজ্ঞেস করে, “তুম কোন পার্টি করতা হ্যায়”? তিনি জবাব দেন তিনি ওয়ালী খানের ন্যাপ পার্টি করেন। তখন সে লোকটি রেগে মেগে বলে, ”বাইনচোত, তুম গাদ্দার হায়। ওয়ালী খান ভি গাদ্দার হায়।” এর পর সে আরও জিজ্ঞেস করে, “আন্দার মে কেতনা মুক্তি হায়”? তিনি বলেন, তিনি জানেন না। সঙ্গে সঙ্গে লোকটি তাকে বেত দিয়ে মারা শুরু করে। মারের চোটে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। জ্ঞান ফিরলে দেখেন তিনি আবার বাঘের খাঁচায় এবং একটি বাঘ তার চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এবারও বাঘ তাঁকে কিছু করে না। এভাবেই প্রতিদিন তার উপর নির্যাতন চালিয়ে আবার বাঘের খাঁচায় ঢুকিয়ে দিত। আর প্রতি রাতেই একটা বাঘের বাচ্চা তার দু’পায়ের মাঝে মাথা রেখে ঘুমাতো। এর মাঝে একদিন প্রায় ১৫ জন লোককে ধরে এনে বাঘের খাঁচায় ঢুকিয়ে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে বাঘগুলো তাদের আক্রমণ করে দেহ ক্ষতবিক্ষত করে। তাদের আর্তনাদে আশেপাশের বাতাস ভারি হয়ে উঠে। সন্ধ্যায় তাদেরকে নির্মমভাবে গুলি করে মেরে ফেলা হয়!এর মধ্যে একদিন দু’জন মেজর এসে বলে, “শের কো নাড়ো”। বাঘের গায়ে হাত দিতেই বাঘ সরে যায়। তারা আবার বললো, “তোমহারা শির শের কা মু কা পাছ লে যাও”। মাথা বাঘের মুখের কাছে নিয়ে গেলে বাঘ চারটিই সরে গিয়ে খাঁচার এক কোণে বসে থাকে। এর পর তারা বলাবলি শুরু করে, “ইয়ে বহুত শরীফ ল্যাড়কা হায়। ইসকো কিঁউ নাহি ছোড় দেতা হায়”।এর পর তাকে ঠাকুরগাঁও মহকুমা হাকিমের কোর্টে হাজির করা হলে মহকুমা হাকিম তাঁকে দু’বছরের কারাদণ্ড দেন। কিন্তু জজ কোর্টে তিনি জামিন পান। জামিন পেয়ে তিনি জেল থেকে বের হয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিবেন এমন সময় একটা মিলিটারির গাড়ি এসে তাঁকে আবার ধরে ফেলে এবং একজন মেজর বলে, “শালা তুম ভাগনে কা কোশেশ করতা হ্যায়”। তাঁকে আবার জেলে পুরে দেওয়া হয়। কয়েকদিন পর মুক্তি বাহিনী এবং মিত্র বাহিনী ঠাকুরগাঁওয়ে প্রবেশ করলে খান সেনারা পালিয়ে যায়। একজন বাঙালি পুলিশ অফিসার তাঁকে চাবি দিলে তিনি জেলখানার লকআপ খুলে বাইরে চলে আসেন।এমনই শ্বাসরুদ্ধকর কাহিনি দিয়ে ভরা ছিল তাঁর জীবন।কিংবদন্তির নায়ক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক কমিউনিষ্ট নেতা, পাঁচপীর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সফিকুল আলম চৌধুরী গত ১২ মার্চ ৭৮ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন।আলম ভাইয়ের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে একটি সংগ্রামী মানুষের জীবনের যবনিকাপাত ঘটল। আমরা হারালাম আমাদের কৈশোরের স্বপ্ন-পুরুষকে। আর দেশ হারালো একজন অকুতোভয় ত্যাগী মুক্তিযোদ্ধাকে।শ্রদ্ধা জানাই এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে!

কমিউনিস্ট পার্টি
মুক্তিযুদ্ধ
কমরেড মোহাম্মদ ফরহাদ
পঞ্চগড়ের বোদা
পাঁচপীর ইউনিয়ন
বাঘের খাঁচায় মুক্তিযোদ্ধা
বাংলাদেশ ছাত্র ইটউনিয়ন
সফল সভাপতি আলম চৌধুরীর।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট