সময়ের উন্নয়ন ডেস্ক:-
পার্বত্য (বান্দরবান) লামা পৌর শহরে সরকারি স্থাপনার জায়গা দখল প্রতিযোগিতা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। শহরের অলিগলি, পুকুর জলাশয়সহ সামান্য যে কোনো ফাঁকা জায়গা যেন দখলদারিত্ব আগ্রাসনে বেহাত হয়ে যাচ্ছে। অনুসন্ধানে জানাযায়, পাক আমলে স্থাপিত ইউনিয়ন বোর্ডের পুরাতন ভবনে সোজা পূর্বদেকে সেমিপাকা পুরাতন গুদাম ঘরটি দখল করে বিক্রি করে দিয়েছেন, অতিন্দ্র লাল দাশ নামের এক বাসিন্দা। তার নামে বাজার ফান্ড প্রশাসনের ১২৭ নং ২৫ বাই ২০ ফুট একটি আবাসিক প্লট রেকর্ডভূক্ত আছে। যা সম্প্রতি স্থাপনাসহ লামা বাজারের ব্যবসায়ী চন্দন দাশের নিকট বিক্রি চুক্তি করেছেন। অপরদিকে চন্দন দাশ তার ক্রয়কৃত ১২৭ এ প্লটটিতে স্থিত ঘরটি অতিন্দ্র লাল মাস্টারকে ভাড়া চুক্তির মাধ্যমে থাকতে দেয়। অতিন্দ্র লাল দাশের নিজ নামীয় আরেকটি ১১১ নং খতিয়ানের ৩৫২ দাগের অংশে ২ শতাংশ জমি রেকর্ড ভুক্ত ও দখলে আছে। এদিকে বাজার আবাসিক প্লটের পাশে সরকারি স্থাপনার একটি অংশ দখল করে বিক্রি করে দেন অতিন্দ্র লাল দাশ। এই জায়গা কিভাবে কারা কাকে বন্দোবস্তি দিল সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজতে গিয়ে প্রথমে কথা হয় অতিন্দ্র লাল দাশের সাথে। তিনি দাবি করেন, সরকারি বোর্ড অফিসের পেছনে সেফটি ট্যাঙ্কি বাদ দিয়ে দক্ষিন পাশের ২৫ বাই ৪৪ ফুট জায়গা তিনি বাজার ফান্ড থেকে বন্দবস্তি লাভ করেছেন(!)। এমন দাবির সত্যতা যাচাইয়ে এই প্রতিনিধি বান্দরবান জেলা পরিষদের বাজার ফান্ড প্রশাসনের বাজার চৌধুরীর প্রতিনিধি অংথইহ্লা মার্মার কাছে জানতে চাইলে, তিনি বলেন, ‘অতিন্দ্র লাল, পিতা সুরেশ চন্দ্র দাশের নামে লামা বাজারের ১২৭ এ ২৫ বাই ২০ ফুটের একটি আবাসিক প্লট তৌজিভূক্ত আছে। তবে সেই প্লটটি অতি সম্প্রতি ব্যবসায়ী চন্দন দাশের নিকট বিক্রি করে দিয়েছেন।’ বাজার চৌধুরীর প্রতিনিধি আরো জানান, ‘আমার জানামতে অতিন্দ্র লাল দাশের নামে বাজার ফান্ড প্লট ঘেঁষে ২ শতাংশ খতিয়ানের জায়গা আছে সেখানে।’
তথ্যের আরো গভীরে গিয়ে জানাযায়, আজ থেকে প্রায় তিন বছর আগে স্বপন রুদ্র নামের প্রতিবন্ধি এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর কাছে একটি প্লট বিক্রির প্রস্তাব দেয় অতিন্দ্র লাল দাশ। প্রস্তাবে রাজি হয়ে স্বপন রুদ্র অতিন্দ্র মাস্টারকে লক্ষাধিক টাকা বায়না করেন। পরবর্তীতে স্বপন রুদ্র জায়গার ইতিবৃত্ত জানার জন্য বাজার ফান্ড প্রশাসনের প্রতিনিধি বাজার চৌধুরীর কাছে এই বিষয়ে আলোচনা করে প্রস্তাবিত জমির দালিলিক সঠিকতা না পেয়ে অগ্রিম টাকা ফেরত নেয়। জানাযায়, তারও আগে লামামুখবাসী জনৈক মৃদল ডাক্তারের নিকটও সরকারি স্থাপনার ওই জায়গা বিক্রি করেছিলেন অতিন্দ্র লাল দাশ। প্রশ্ন হচ্ছে সরকারি স্থাপনার (ইউনিয়ন বোর্ড অফিসের) জায়গা কোনো ব্যক্তি কি বিক্রি করতে পারেন(?)। ইতিহাস খোঁজতে গিয়ে অনুসন্ধান টিমের কাছে আরো কিছু তথ্য আসে। ‘দেশ স্বাধীনের আগে পাক সরকার প্রথম ইউনিয়ন বোর্ড করে (বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদ) দেশের সকল ইউনিয়নে একটি পাকা অবকাঠামো তৈরি করে দেন। সেই সময় লামায়ও একটি বোর্ড অফিস প্রতিষ্ঠিত হয়। যার অবস্থান বর্তমান পৌর মার্কেট লাগুয়া পূর্বদিকে (চাইল্ড কেয়ার স্কুল) যেটি। ভবনটির পেছনে উত্তরাংশে একটি বড় সেফটি ট্যাঙ্কি রয়েছে। দক্ষিনাংশে বর্তমান ৪র্থ শ্রেণি কর্মচারী ক্লাব । তার ঠিক উত্তর দিকে বোর্ড অফিসের একটি টিনসেট গুদাম ছিলো। ওই গুদামটি বর্তমানে অতিন্দ্র লাল দাশ দখল করে আছে। সরেজমিন অনুসন্ধানকালে ওই শিক্ষক জানায়, মৃদল ডাক্তারের নিকট আরো প্রায় ১০ বছর আগে জায়গাটি বিক্রি করে দিয়েছেন। এ সময় অতিন্দ্র লাল মাস্টার দাবি করেন ২৫ বাই ৪৪ ফুট দৈর্ঘ্য প্রস্তের সরকারি স্থাপনা লাগুয়া খালি জায়গাটি তিনি বাজার ফান্ড থেকে বন্দবস্তি পাওয়ার আবেদন করে মালিকানা লাভ করেছেন। কথার মারপেঁচ ঘুরিয়ে তিনি এও বলেন, ‘আমার কাছ থেকে কিনে নিয়ে মৃদুল ডাক্তার তার নামে কাগজ বানিয়ে নিয়েছেন’। এ বিষয়ে আবারো জানতে চাওয়া হয়, বাজার চৌধুরীর প্রতিনিধির কাছে। তিনি এক কথায় জানিয়ে দেন, বাজার ফান্ড এ ধরনের কোনো জায়গা কাউকে বন্দোবস্তি দেয় নাই। সরেজমিন দেখাযায়, সরকারি পুরাতন স্থাপনার একটি ওয়াল এখনো সেখানে বিদ্যমান। এর উত্তর দক্ষিনে টিনের বেড়া দেয়া আছে। কিন্তু অতিন্দ্র লাল মাস্টার মৌখিকভাবে বন্দবস্তি লাভের কথা জানালেও তিনি এই দাবির স্বপক্ষে কোনো দালিলিক প্রমান দেখাতে পারেন নাই। একই অনিয়ম দূষণ ও জবর দখল হয়ে যাচ্ছে বাজারের শতবর্ষী একটি পাবলিক পুকুর।
চলবে….