পার্বত্য লামা উপজেলায় এসএমসি সভাপতির শ্রেষ্ঠত্বের গল্প রয়েছে যাকে নিয়ে, তিঁনিই একজন ইউনুছ চৌধুরী। শিক্ষানুরাগী সাদানের মানুষ একজন ইউনুছ চৌধুরীকে নিয়ে রয়েছে সার্থক জীবনের গল্প।পার্বত্য লামা উপজেলা ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের কুমারী গ্রামটি ছিলো একদা দুর্গম। বনের হাতিসহ হিংস্র প্রাণিদের উৎপাত মানুষ বসবাস করা ছিল দুষ্কর। বিগত শতাব্দির ৯০’র দশকে অন্ধকারাচ্ছন্ন সেই গ্রামে শিক্ষা বিস্তারে একজন ইউনুছ চৌধুরীর অবদান অনবদ্য। গ্রামের রাঙ্গাঝিরিতে ১৯৯৪ সালে এক একর জমি দান করে একটি বেসরকারি রেজিঃ প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন তিঁনি। স্থানীয়রা স্কুলটির নাম করণ করেন ‘ইউনুছ চৌধুরী রেজিঃ প্রাথমিক বিদ্যালয়। এর পর সরকারি করণ করা হয়ে আজ স্কলটির নাম “রাঙ্গাঝিরি ইউনুছ চৌধুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।” শুরু থেকে আজ পর্যন্ত বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত আছেন ইউনুছ চৌধুরী। তিঁনি সর্বস্তরের মানুষকে কাছে টেনে নেন। সম্প্রতি তাঁর সাথে আলাপকালে প্রসঙ্গক্রমে তিঁনি বলেন, ‘মানুষের পাশে থাকতে পারছি এটাই বড় বিষয়। মানবিক বোধ থেকেই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছি। সুশিক্ষা অর্জন করা ছাড়া কোনো মানুষই ভালো কিছু করতে পারে না। তাই ভালোভাবে জীবনযাপনের জন্যে সুশিক্ষা অর্জনের বিকল্প নেই। আমাদের নবী কারিম (সঃ) বলেছেন, জ্ঞান অর্জনের জন্যে সুদূর চীন দেশে যাও। সামাজিক উন্নতির জন্যেও শিক্ষার প্রয়োজন অনেক। প্রান্তিক গ্রামের সন্তানদের জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করতেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছি। পরিচালনার সাথে সম্পৃক্ত আছি সেই শুরু থেকে। যদি শিক্ষার্থীরা এখান থেকে পড়াশোনা করে ভালো কিছু করে, মানুষের সেবায় নিজেকে নিবেদিত করে তবেই এসব প্রতিষ্ঠান গড়া সার্থক হবে আমার’।সম্প্রতি রাঙ্গাঝিরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাক্ষাৎ হয় শিক্ষানুরাগী ইউনুছ চৌধুরীর সাথে। কথপোকথনে তাঁর জীবন গল্প শুনেছি। চট্টগ্রামের উজান ভাটি কর্ণফুলী নদী উপাত্যকায় জন্ম নেয়া এই গুনি মানুষটি। চাকুরির সুবাধে বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী চকোরিয়া উপজেলায় বসতি স্থাপন করে স্থায়ী হন এখানে। এখানকার সাগর নদী পাহাড় বেষ্ঠিত মাতামুহুরি নদীর কুল কুল শব্দের মায়াজালে তিঁনি নিজেকে বিলিয়ে দেয়। এর পর পার্বত্য জনপদের কোনো এক গ্রামে অন্ধকারে আলোর মশাল হাতে এগিয়ে আসতে হয়েছে তাকে। হাতিসহ বনের হিংস্র প্রাণিদের ভয়কে জয় করে ‘আধাঁর বাঁধন টুটি’ শিক্ষার আলো জ্বালিয়ে দিতে আত্মনিয়োগ করেন। গল্পের শুরুটা কিন্তু তারও আগ থেকে। কক্সবাজার জেলার বৃহত্তর চকোরিয়া উপজেলার পুরাতন বিমান বন্দর এলাকায় একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত করার প্রত্যয়ে কতক শিক্ষানুরাগী মানুষের আগমন ঘটে তার কাছে। ঘটনা চক্রে তখন তিঁনি চকোরিয়া সীমান্ত ঘেঁষে লামার কুমারি রাঙ্গাঝিরি গ্রামে শিক্ষা বিস্তারের উদ্যােগ নেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছন্দা ম্যাডামসহ সহকারি শিক্ষকরা বলেন, ইউনুছ চৌধুরী বিদ্যালয়ের জমিদাতা, প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি নয় শুধু; তিঁনি আমাদের পিতৃতুল্য একজন ত্যাগি অভিভাবক। এসএমসি সভাপতি হিসেবে বান্দরবান জেলাতে রয়েছে তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের গৌরব। সাদা মনের মানুষ, শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্ব একজন ইউনুছ চৌধুরীর এই কীর্তি একদিন হয়তো ইতিহাস হয়ে থাকবে। জীবদ্দশায় বড় কোনো স্বীকৃতি পদক পাওয়ার দাবি রাখে সমাজকে শিক্ষায় এগিয়ে নেয়া ইউনুছ চৌধুরীরা। লামার হাজার মানুষের প্রত্যাশা এই ইউনুছ চৌধুরী রাষ্ট্র প্রধানের হাত থেকে রাষ্ট্রীয় কোনো পদক, সম্মানা অর্জন করবেন। এমন স্বীকৃতি সমাজে আরো অনেক ইউনুছ চৌধুরী জন্মাবে।