সময়ের উন্নয়ন ডেস্ক:-
বান্দরবানের লামায় নিজ স্ত্রী ও সন্তানকে হত্যার চেষ্টায় স্ত্রীর দায়ের করা মামলায় স্বামী জেলে। ১১ জুলাই লামা সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুর রহিমের বিরুদ্ধে থানায় অবিযোগ করে তার স্ত্রী। পরে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে এখন জেলে।
অভিযোগে প্রকাশ, ১১ জুলাই সকাল ১০ টায় উপজেলার লামা সদর ইউপি মেরাখোলা মুসলিম পাড়া, ২নং ওয়ার্ড এর বাসিন্দা আব্দুর রহিম (৪০), পিতা- আব্দুর রহমান, ২। সুলতানা ইয়াছমিন (৩৫), স্বামী- আব্দুল ওহাব, ৩। জেরিন (২৪), ৪। সাইফুল ইসলাম (৩০), ৫। হুমায়রা আক্তার (৩০), ৬। উম্মে সালমা (৩৩), সর্ব পিতা- আব্দুর রহমান। এই ৬ জন দলবদ্ধ হামলা করে বুলবুল জান্নাত ও তার সন্তানকে হত্যা করতে চেয়েছিল। ওই সময় হামলাকারীরা নগদ এক লাখ টাকা মুল্যের স্বর্ণালঙ্কার ছিনিয়ে নেয়। বুলবুল জন্নাত (৩২) এজাহারে উল্লেখ করেন, “বিবাদীগণ উচ্ছৃঙ্খল, বেপরোয়া, অত্যাচারী, প্রতারক। ১নং বিবাদীর সাথে গত অনুমান ১০ বছর পূর্বে কাবিননামা সম্পাদন পূর্বক আমার বিবাহ সম্পন্ন হয়। ১নং বিবাদীর ঔরষে আমার গর্ভে ২টি কন্যা সন্তান এবং একটি পুত্র সন্তান জন্মলাভ করে। আমার কনিষ্ট কন্যাসন্তান অটিস্টিক শিশু হয়। বিবাহের পর হইতে অদ্যাবধি পর্যন্ত ১নং বিবাদীর এবং আমার সংসারের খরচ আমার পিত্রালয় হইতে বহন করিয়া আসিতেছে। ১নং বিবাদী আমার দ্বারা বিভিন্ন এনজিও সংস্থা হইতে এবং বিভিন্ন লোকজনের নিকট হইতে লক্ষ লক্ষ টাকা ঋণ গ্রহণ করে। আমার সুখের দিকে চেয়ে আমার পিত্রালয় হইতে এই পর্যন্ত প্রায় পনের লক্ষ টাকার অধিক এনে ১নং বিবাদীর ঋণ পরিশোধ করেছি। লামা বাজারস্থ আমার ভাড়া বাসার গত ০৭ বছরের ভাড়া এবং – সংসারের খরচ আমার পিত্রালয় হইতে বহন করে। আমার সন্তানগণ ভূমিষ্ট হওয়ার সময় যাবতীয় খরচ আমার পিত্রালয় – হইতে বহন করে। এতদসত্ত্বেও বিবাদীগণ আমার ভাড়া বাসায় এসে কারণে অকারণে আমার সাথে ঝগড়া সৃষ্টি করিয়া আমাকে মানসিক নির্যাতন সহ মারধর করে। আমার সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে এবং আমার পিত্রালয়ে মানসম্মানের কথা – ভেবে আমি দীর্ঘ বছর ধরে আইনের আশ্রয় গ্রহণ করিনি। ১নং বিবাদী দেনা পরিশোধ না করে কৌশলে আত্মগোপন হইলে আমি দেনা পরিশোধ করার জন্য ১নং বিবাদীর কথায় আমার ভাবীর চেইন নিয়ে চকরিয়াস্থ “চিন্তাহরণ জুয়েলার্স এ বন্ধক দিয়ে ষাট হাজার টাকা দিই। বিবাদীগণের নির্যাতন সহ্য করিতে না পারিলে ১নং বিবাদীর সংসার ছেড়ে আমাকে চলে – যাওয়ার জন্য বলে। অন্যথায় ১নং বিবাদী ২য় বিবাহ করিবে, আমাকে প্রাণে হত্যা করিয়া ফেলিবে কিংবা গুরুতর জখম করিবে মর্মে হুমকি প্রদান করে এবং আমার সংসার খরচে সামান্যতম অংশগ্রহণ করা থেকেও বিরত থাকে। গত অনুমান ০৩ দিন পূর্বে হইতে ১নং বিবাদী লামা বাজারস্থ আমার ভাড়া বাসায় আসেনি। আমি ১নং বিবাদীর সাথে যোগাযোগ করে ১১/০৭/২০২৪ইং তারিখ সকাল অনুমান ১০.০০ ঘটিকার সময় লামা থানাধীন মেরাখোলা মুসলিম পাড়াস্থ বিবাদীদের বসতভিটায় গেলে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে সকল বিবাদীগণ আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করত: বিবাদীদের ঘরে কেন গিয়েছি বলিয়া ২, ৩, ৫ ও ৬নং বিবাদীগণ সাথে সাথে আমার চুলের মুঠি ধরে টানাহেঁচড়া করিয়া আমাকে মাটিতে ফেলে দেয়। ৫নং বিবাদী বসতঘর থেকে একটি লোহার রড এনে ১নং বিবাদীর হাতে দিলে সাথে সাথে ২নং বিবাদী তাহার দুই হাত দ্বারা আমাকে পিছন দিক হইতে সজোরে চেপে ধরে। অতঃপর ১নং বিবাদী হত্যার উদ্দেশ্যে আমার মাথা লক্ষ্য করিয়া লোহার রড দ্বারা সজোরে আঘাত করিলে আমি শোর চিৎকার দিয়ে মাটিতে পড়ে যাই এবং আমার কপালে মারাত্মক জখমপ্রাপ্ত হই। ৩নং বিবাদী আমার নিচের ঠোঁটের ডান পাশে ঘুষি মারিয়া মারাত্মক রক্তাক্ত ফাটা জখম করে। ৪নং বিবাদী আমার পরিধীয় কাপড়-ছোপড় টানাহেঁচড়া করিয়া চরম শ্লীলতাহানি করত: আমার গলা চেপে ধরে শ্বাসরোদ্ধ করে হত্যার চেষ্টা করে। ৫নং বিবাদী গাছের লাঠি দ্বারা আমার পিঠে এবং ৬নং বিবাদী গাছের লাঠি দ্বারা আমার কপালের উপরিভাগে হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত করিয়া নিলা ফুলা জখম করে। অতঃপর সকল বিবাদীগণ আমার শরীরের সর্বাঙ্গে উপুর্যপুরি লাথি মারিতে থাকিলে তথায় উপস্থিত আমার শিশু সন্তান আয়াশ (৫) বছর কান্নাকাটি শুরু করিলে ২নং বিবাদী আমার ছেলের কপালের ডান পাশে ঘুষি মারিয়া থেতলানো নিলা ফুলা জখম করে। ২নং বিবাদী আমার গলায় পরিহিত ০১ ভরি ওজনের ১টি স্বর্ণের চেইন, যাহার অনুমান মূল্য ১,০০,০০০/- (এক লক্ষ) টাকা জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়। ঘটনার পর পর আমার ছোট দভাই মো: আরফাত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বিবাদীদের কবল হইতে গুরুতর জখমপ্রাপ্ত অবস্থায় আমাকে এবং আমার সন্তানকে উদ্ধার করিয়া লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এসে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে।” এজাহার পাওয়ার পরপরই ১১ জুলাই সন্ধায় পুলিশ ১ নং বিবাদী বুলবুল জান্নাতের স্বামী আব্দুর রহিমকে গ্রেফতার পূর্বক কোর্টের মাধ্যমে বান্দরবান কারাগারে পাঠায়। উল্লেখ্য আব্দুর রহিম লামা কোর্টের একজন শিক্ষানবিশ উকিল হিসেবে এলাকাবাসী জানতেন। এ বিষয়ে লামা আইনজীবি সমিতির নেতৃবৃন্দ জানান আব্দুর রহিম উকিল নয়।